নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ একটি বিশেষ আইন । নারী ও শিশু নির্যাতনমূলক অপরাধসমূহ কঠোরভাবে দমনের উদ্দেশ্যে এই আইন প্রনয়ন করা হয়েছে । পরবর্তীতে ২০০৩ সালে, ২০২০ সালে এবং সর্বশেষ ২০২৫ সালে যুগোপযোগী করে আরও সংশোধনী আনা হয় । এখানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর মাধ্যমে আনীত উল্লেখযোগ্য সংশোধন সমূহ আলোচনা করা হয়েছে ।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ধারা ২ এ তিনটি নতুন সংজ্ঞা যুক্ত করা হয়েছে ।
- (ছছ) “বলাৎকার” অর্থ কোন ছেলে শিশুর মুখ বা পায়ুপথে কোন ব্যক্তি কর্তৃক সংঘটিত যৌনকর্ম; (এই সংশোধন অধ্যাদেশ অনুসারে বলাৎকারও ধর্ষণ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে )
- (ছছছ) “মারাত্মক জখম” অর্থ Penal Code, 1860 এর Section 320 এ সংজ্ঞায়িত “Grievous Hurt”;
- (ঞঞ) যৌনকর্ম অর্থ কোন নারী বা শিশুর যোনি বা পায়ুপথ বা মুখের অভ্যন্তরে কোন ব্যক্তি কর্তৃক যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে পুরুষাঙ্গ বা দেহের যে কোন অংশ কিংবা অন্য যে কোন বস্তুর প্রবিষ্টকরণ ।
ধারা ৪ এর সংশোধনঃ ধারা ৪ এ সংশোধন অধ্যাদেশে শুধু মাত্র অর্থদন্ড বৃদ্ধি করা হয়েছে ।
- উপধারা (১) এ অর্থদন্ড “এক লক্ষ” টাকার পরিবর্তে “বিশ লক্ষ” টাকা করা হয়েছে ।
- উপধারা (২)ক এ অর্থদন্ড “এক লক্ষ” টাকার পরিবর্তে “দশ লক্ষ” টাকা করা হয়েছে ।
- উপধারা (২) খ অর্থদন্ড “পঞ্চাশ হাজার” টাকার পরিবর্তে “পাঁচ লক্ষ” টাকা করা হয়েছে ।
- উপধারা (৩) এ অর্থদন্ড “পঞ্চাশ হাজার” টাকার পরিবর্তে “পাঁচ লক্ষ” টাকা করা হয়েছে ।
ধারা ৯ এর সংশোধনঃ
- উপধারা (১) প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে, “যদি কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহা হইলে তিনি মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবে ।”
- ব্যাখা (১) যদি কোন ব্যক্তি বিবাহ বন্ধন ব্যাতীত ষোল বছরের অধিক বয়সের কোন নারীর সহিত তাহার সম্মতি ব্যাতিরেকে বা ভীতি প্রদর্শন করিয়া বা প্রতারণামূলকভাবে তাহার সম্মতি আদায় করিয়া, অথবা ষোল বছরের কম বয়সের কোন শিশুর সহিত তাহার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যাতিরেকে যৌনকর্ম করেন, তা হলে তিনি উক্ত নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবে ।
- ব্যাখা (২) এই ধারার উদ্দেশ্য পূরন কল্পে ধর্ষণ অর্থে বলাৎকারও অন্তর্ভুক্ত হবে ।
- উপধারা (২) এ অর্থদন্ড “অন্যূন এক লক্ষ টাকা” এর পরিবর্তে “অনধিক ২০ লক্ষ টাকা” করা হয়েছে ।
- উপধারা (৩) এ ‘দলবদ্ধভাবে’ শব্দের পরে ‘সংঘবদ্ধভাবে’ এবং অর্থদন্ড “অন্যূন এক লক্ষ টাকা” এর পরিবর্তে “অনধিক ২০ লক্ষ টাকা” করা হয়েছে ।
- উপধারা (৪) এ নতুন দফা (গ) যুক্ত করা হয়েছে এভাবে, “ধর্ষনের উদ্দেশ্যে শরীরের কোন অঙ্গ, ধারালো অস্ত্র, রাসায়নিক পদার্থ, বা অন্য কোন উপকরণ ব্যবহার করে কিংবা অন্য কোনভাবে নারী বা শিশুর যৌনাঙ্গ বা স্তনে মারাত্মক জখম করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অনূর্ধ ১০ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে ।”
- উপধারা (৫) এ “পুলিশ শব্দের পরে অন্য কোন শৃঙ্খলা বাহিনীর” এবং অর্থদন্ড “অন্যূন ১০ হাজার টাকা” এর পরিবর্তে “অনধিক ৫০ হাজার টাকা” করা হয়েছে ।
- উপরাধা (৬) নতুনভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে এভাবে “এই ধারায় উল্লেখিত অর্থদন্ড ধারা ১৫ এর বিধান অনুসারে আদায়পূর্বক ক্ষতিপূরণ হিসাবে অপরাধের শিকার ব্যক্তি বা ক্ষেত্রমত তার আইনগত উত্তরাধিকারীকে প্রদান করতে হবে ।”
নতুন ধারা ৯(খ) সংযুক্ত করা হয়েছেঃ বিয়ের প্রলোভনের মাধ্যমে যৌনকর্ম করার দন্ড
যদি কোন ব্যক্তি দৈহিক বলপ্রয়োগ ব্যতীত বিবাহের প্রলোভন দেখাইয়া ষোল বছরের অধিক বয়সের কোন নারীর সংগে যৌনকর্ম করেন এবং যদি উক্ত ঘটনার সময় উক্ত ব্যক্তির সহিত উক্ত নারীর আস্থাভাজন সম্পর্ক থাকে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৭ বছর কারাদন্ডে দন্ডনীয় হইবে এবং এর অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হইবেন ।
ধারা ১১ এর সংশোধানঃ
- দফা (ক) নতুনভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, “মৃত্যু ঘটানোর জন্য মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবেন ।”
- নতুন দফা (কক) সংযুক্ত করা হয়েছে এভাবে “মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টার জন্য যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে বা অনধিক ১২ বছর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবে এবং এর অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবে ।”
- দফা (গ) এ কারাদন্ড “অনধিক ৩ বছর কিন্তু অন্যূন ১ বছর” এর পরিবর্তে “অনধিক ৫ বছর কিন্তু অন্যূন ২ বছর” করা হয়েছে ।
নতুন ধারা সংযুক্ত করা হয়েছেঃ ধারা ৩৫। ধারা ১১ এর দফা (গ) এ বর্নিত অপরাধ সম্পর্কে বিশেষ বিধান-
- (১) এই আইনে যা কিছু থাকুক না কেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ বলবৎ হওয়ার তারিখ হতে ধারা ১১ এর দফা (গ) এ বর্নিত অপরাধ প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচারার্থ গ্রহনীয় ও বিচারযোগ্য হবে । তবে শর্ত থাকে যে এই অধ্যাদেশ বলবৎ হবার পূর্বে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ধারা ১১(গ) এর অধীন দায়েরকৃত অনিষ্পন্ন মামলাসমূহ এখতিয়ারসম্পন্ন প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বদলি হবে না এবং উক্ত অধ্যাদেশ বলবৎ হবার পূর্বে এই আইনের অধীনে অনিষ্পন্ন মামলা সমূহ তদন্তকারী কর্মকর্তা, এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত, ট্রাইব্যুনাল এবং আপীল-সংশ্লিষ্ট আদালতে এমনভাবে পরিচালিত ও নিষ্পত্তি হবে যেন এই অধ্যাদেশ বলবৎ হয় নাই ।
- (২) ধারা ১১ (গ) এ বর্নিত অপরাধ বিচারার্থ গ্রহনীয়, আপসযোগ্য ও জামিন-অযোগ্য হবে এবং এই উক্ত অপরাধের অভিযোগ দায়ের, তদন্ত, বিচার, আপিল ও নিষ্পত্তিসহ পদ্ধতিগত সকল ক্ষেত্রে এই আইনের অন্যান্য ধারার বিশেষ বিধানাবলির পরিবর্তে ফৌজদারী কার্যবিধি ও সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ এর বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে ।
নতুন ধারা ২৬ক সংযুক্ত করা হয়েছে, ধারা ২৬ক । শিশু ধর্ষণ অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-
- (১) ধারা ২৬ এর উপ ধারা (১) এর বিধান স্বত্বেও সরকার এই আইনের অধীন শিশু ধর্ষণ সংক্রান্ত অপরাধ বিচারের নিমিত্ত প্রত্যেক জেলায় ও মহানগর এলাকায় এক বা একাধিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারবে এবং এইরুপ ট্রাইব্যুনাল শিশু ধর্ষন অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল নামে অভিহিত হবে ।
- (২) একজন বিচারক সমন্বয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হবে এবং সরকার জেলা ও দায়রা জজগনের মধ্য হতে ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিযুক্ত করবেন ।